চীন সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধে ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত ডাটা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেশটির স্মার্টফোন কোম্পানি হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে। এজন্য বিভিন্ন দেশ হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহারের ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে চীন সাইবারস্পেসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য এখন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। আর তাদের এ কার্যক্রমে প্রধান হাতিয়ার সাবমেরিন ক্যাবল।
জি নিউজের এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। এ ঝুঁকি এড়াতে চীনা টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলির ব্যাপারে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনের স্মার্টফোন কোম্পানি হুয়াওয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে চীনের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাদের অভিযোগ, হুয়াওয়ের মাধ্যমে চীন প্রযুক্তি চুরি এবং গুপ্তচরবৃত্তি করছে। দেশ দুটি হুয়াওয়ের সামগ্রী ব্যবহার এবং হুয়াওয়ের পণ্য ও সেবা বিক্রির ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে।
তারা জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন শুধু হুয়াওয়ে নয়, জেডটিই-র মতো চীনের অন্যান্য সমস্ত বড় বড় টেলিকম সংস্থাগুলোও যে বিপদ ডেকে আনতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন রয়েছে।
চীন সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ৩৮০টি সক্রিয় সাবমেরিন ক্যাবল বিশ্বের ৯৫ শতাংশ ডেটা বহন করে। এই সাবমেরিন ক্যাবলগুলো কোনো দেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডের সহযোগী সংস্থা হুয়াওয়ে মেরিন বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০টি সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্প নির্মাণে কাজ করছে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এ চীনা সংস্থা ৩ হাজার ৭৫০ মাইলের একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে, যা ব্রাজিলকে ক্যামেরুনের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সংস্থাটি ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা সংযোগকারী সাড়ে ৭ হাজার মাইলের আরও একটি ক্যাবল প্রকল্পে কাজ করেছে। হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী সাবমেরিন ক্যাবল তৈরির ক্ষেত্রেও জড়িত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য অনেক দেশের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বিশ্বাস- এই ক্যাবলগুলোর মাধ্যমে অন্যান্য দেশ চীনের গুপ্তচরবৃদ্ধির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলগুলোতে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেটা প্রবাহে প্রবেশাধিকার পাবে। এই ক্যাবলগুলো স্যাটেলাইটের চেয়েও বেশি ক্ষমতাধর।
তারা বলছেন, চীন ইতোমধ্যে গ্রেট ফায়ারওয়ালের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ইন্টারনেটে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। যেসব অনলাইন কনটেন্ট তাদের বিরুদ্ধে যায় নিজস্ব ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা সেটি সেন্সর করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন যদি সাবমেরিন ক্যাবলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে তবে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করবে তারা।