×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০২-২৭
  • ৯৮৭ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএন-সিডিপি) ত্রিবার্ষিক সভায় উন্নয়নশীল দেশে তালিকাভুক্ত করতে চূড়ান্ত সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তুতির জন্য দুই বছর বাড়তি সময় দেওয়ার সুপারিশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। ফলে আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে আর কোনো বাধা রইল না। এ উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেকটা এগিয়ে গেছে। এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা শুরু হয়।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এখন যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, ওষুধ খাতে সুবিধা, মেধাস্বত্ব সুবিধাসহ অন্য যেসব সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। তবে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে বিনিয়োগকারী আকর্ষণ, ক্রেডিটরেটিংয়ে উন্নয়ন, বিশ্বদরবারে মর্যাদা বৃদ্ধিসহ নানা সুবিধাও পাওয়া যাবে।

১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। ওই সময় সিডিপি জানিয়েছিল, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বিবেচ্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এ তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে তা ছয় বছর ধরে রাখতে হবে। তিন বছর পর পর পর্যালোচনা করা হবে। সিডিপির সেই ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভাটিই গতকাল শেষ হয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, এরই মধ্যে সিডিপি সুপারিশ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সভা শেষরাত পর্যন্ত চলবে। সভা শেষে তারা ইকোসকে সুপারিশগুলো পাঠাবে। উন্নয়নশীল দেশ হলে বাংলাদেশের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর অন্যতম হলো—উন্নয়নশীল দেশের কাতারে টিকে থাকার প্রস্তুতি নিতে হবে, প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, বিনিয়োগ আকর্ষণের পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং বাজারে বৈচিত্র্য আনতে হবে।’

উন্নয়নশীল দেশ হতে সংশ্লিষ্ট দেশটির মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে এক হাজার ২৩০ ডলার। বাংলাদেশে ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল এক হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন হয়, যেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়। আর ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫.২। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকাল ভোগ করতে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারির বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়। সিডিপি সে অনুসারে পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল নির্ধারণ করে। এ সময় শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। নিয়ম অনুসারে এটি ২০২৪ সালে হওয়ার কথা ছিল।

প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তা ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি হিসেবে পৃথকভাবে শ্রেণিবদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এ পর্যন্ত বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।

বিকেল ৪টায় এ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat