×
  • প্রকাশিত : ২০২০-১২-০৭
  • ১১৩১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

 আজ ৭ ডিসেম্বর, কেন্দুয়া হানাদার মুক্ত দিবস।


১৯৭১ সালের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া থানার পার্শ্ববর্তী মদন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে পাকবাহিনী পরাজিত হয়। সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে কেন্দুয়ায় অবস্থানরত পাকসেনা ভয়ে আতংকিত হয়ে পরে। অবস্থায় ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের পূর্বেই পাক বাহিনী কেন্দুয়া ছেড়ে পালিয়ে যায়। হানাদাররা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানী টুআইসি বীরমুক্তিযোদ্ধা সুবোধ চন্দ্র তার সহকর্মীদের নিয়ে কেন্দুয়া দখল করে বিজয় পতাকা উড়ান। পরে তারা বিজয় মিছিল করে। সেদিন হাজারো জনতা স্বত:স্ফূর্ত ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানান। হানাদার মুক্তহয় কেন্দুয়া।

 

মুক্তিযুদ্ধে উত্তাল দিনগুলোতে সারা বাংলাদেশর মত কেন্দুয়াও উত্তাল ছিল। স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগীতায় পাক দোসররা কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গনহত্যা নির্যাতন চালায়। আর এই নির্যাতনের সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে মাসকা ইউনিয়নের ঘোড়াইল গ্রামের ঠাকুর বাড়িতে। রাতের আঁধারে অসংখ্য নিরীহ মানুষকে চোখ বেঁধে ঠাকুর বাড়ির পাশে ডোবার সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি পাক দোসরা, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে লাশ ডোবায় ফেলে দেয়।

 

এই দিন দীপেন্দ্র চক্রবর্তী, রোহিনী বণিক, অনিল বণিক, উপেন্দ্র পোদ্দার, নন্দলাল দে সহ অনেকে শহীদ হন। অপরদিকে চিরাং ইউনিয়নের ধোপাগাতী গ্রামের সামনে তখনকার জনপ্রিয় ডাক্তার খগেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাসসহ জনকে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যার পর লাশ ফেলে রেখে চিরাং ব্রিজের পাশে সেদিন পাকহানাদার বাহিনী আশেপেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক নির্যাতন চালায়।

 

তাছাড়া কেন্দুয়া উপজেলার দূর্গম এলাকা বাড়লা গ্রাম মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি ছিল। এখান থেকে কেন্দুয়া নিকটবর্তী বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযুদ্ধারা অনেকগুলো দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করে। রাজাকারদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধাদের বাড়লা ঘাটির তথ্য পাক বাহিনী জেনে যায়। কিন্তু পাক বাহিনী এই গ্রাম আক্রমণ করার আগেই মুক্তিবাহিনী তাদের ঘাঁটি সরিয়ে নেয়। পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়।

 

এছাড়া রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নে কলসাটি গ্রামের মধ্য দিয়ে পাকবাহিনী এক স্কুল শিক্ষক কে হাত-পা চোখ বেঁধে টানতে টানতে গ্রামের ব্রিজের পাশে নিয়ে আসে। তারপর ব্রিজের একপাশে দাঁড় করিয়ে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলতে বলা হয়। আব্দুল লতিব মাস্টার জয় বাংলা বলে চিৎকার করে উঠে সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালায়। বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায় বুক শহীদ হন লতিফ মাষ্টার।

 

এই রকম অসংখ্য শহীদের রক্তে ভিজে আছে কেন্দুয়ার মাটি। তাদের মধ্যে বালিজুরা গ্রামের মুখলেছুর রহমান খান পাঠান বলাইশিমুল ইউনিয়নের কচন্দরা গ্রামের মোখলেছুর রহমান অন্যতম। তাছাড়া আরো শহীদ হন মাসকা ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের ইপিআর নায়েক সুবেদার আব্দুর রশিদ রোয়াইল বাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের নন্দিত কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের পিতা পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর রহমান আহমেদ সহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদ।

 

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat