×
  • প্রকাশিত : ২০২২-০৮-০১
  • ৫৮২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

পহেলা আগষ্ট, শোকের মাসের শুরুর দিনটি বাংলাদেশ-ভারত এর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ ৬৮ বছর শোষণ, নির্যাতন এবং পরিচয়হীন এক জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতার আনন্দে উজ্জীবিত করার দিন। সীমান্ত পাড়ের মানুষগুলো জানতোও না যে, পহেলা আগষ্টের সূর্যোদয় তাদের জন্য কী সীমাহীন আনন্দ বার্তা নিয়ে আসছে, তাদের পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করতে যাচ্ছে। ৩১ জুলাই মধ্যরাত, বহু প্রতীক্ষার পরে দুই দেশের মধ্যে বিনিময় হয় ছিটমহল। আর প্রতিবেশী দুই দেশের ছিটমহলবাসীরা ফিরে পায় এক নতুন জীবন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ছিটমহলবাসীর মধ্যরাতের এই স্বাধীনতা ভারত-বাংলাদেশ এর বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে, দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের এক নবদ্বার উন্মুক্ত করেছে।

 

বাংলাদেশ ও ভারতের মোট ছিটমহলের সংখ্যা ১৬২টি। এরমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতের ছিটমহলের সংখ্যা ১১১। আর ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহল ৫১টি। চুক্তি বাস্তবায়নের পর ভারতের অভ্যন্তরের ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর ভূমি বাংলাদেশের সম্পদ  হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়া সেখানের ২ হাজার ২৬৭ দশমিক ৬৮২ একর অপদখলীয় ভূমি বাংলাদেশের অংশে আসে। অপরদিকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ৫১টি ছিটমহলের ৭ হাজার ১১০ দশমিক ০২ একর ভূমি ভারতের অংশ বলে বিবেচিত হয়। সেখানের ২ হাজার ৭৭৭ দশমিক ০৩৮ একর অপদখলীয় ভূমি ভারতের মধ্যে চলে যায়। বাংলাদেশ অংশের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ৪১ হাজার ৪৩৩ জন। আর ভারতের ৫১টি ছিটমহলের লোকসংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ছিটমহলের মানুষ বাড়িতে বাড়িতে নানা উৎসবের আয়োজন করে। আর রাত বারোটার সময় মোমবাতি জ্বালিয়ে আনন্দ সব পালন করে। ছিটমহলে ৬৮ বছর অবরুদ্ধ ছিলেন বলে তারা বাড়িতে বাড়িতে ৬৮টি মোমবাতি প্রজ্বলন করে। এছাড়া জুমার নামাজের পর ছিটমহল এলাকায় বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ২০১৫ সালের পর থেকে প্রতিবছর এই দিনটিকে মহা আনন্দ ও ধুমধাম আয়োজনের মাধ্যমে পালন করে ছিটমহলবাসী।

 

ছিটমহল সমস্যা মূলত অখন্ড ভারতের কোন সমস্যা ছিলো না। এই সঙ্কট তৈরি হয় অখণ্ড ভারত খণ্ড করার সময়েই। গোড়ায় গলদটা রেখে যান ব্রিটিশ সিরিল র‌্যাডক্লিফ। তিনিই পাকিস্তান-ভারত সীমানা নির্ধারণ করেন। সেই সঙ্গে সৃষ্টি করেন এক অসহনীয় মানবিক সমস্যার। ভারতের ভেতর বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভেতর ভারত। যেমন কুড়িগ্রাম ছিটমহলের ভেতরে রয়েছে দাশিয়ারছড়া। আবার এই দাশিয়ারছড়ার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের ছিটমহল চন্দ্রখানা। র‌্যাড ক্লিফের ম্যাপে কোচবিহারের বেশ কিছু অংশ চলে আসে তৎকালীন পাকিস্তানে। মূলত এই ভূমিগুলোই হলো ছিটমহল আর এখানে থাকা বাসীন্দাদের বলা হতো ছিটের মানুষ। দেশভাগের পর বাংলা পাঞ্জাবের সীমারেখা টানার পরিকল্পনা করেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন। জন্য ১৯৪৭ সালে গঠন করেন সীমানা নির্ধারণ কমিশন। ব্রিটিশ আইনজীবী মি. সিরিল র‌্যাডক্লিফকে বসানো হয় কমিশনের মাথায়। তিনি এতই দ্রুত তার কাজ সমাধা করলেন যে, সীমানা নির্ধারণে সময় নিলেন মাত্র দেড়মাস। তারপরই মানচিত্র। দেখা গেল, ওই মানচিত্রে ভারতের ১১১টি ভূখণ্ড ঢুকে পড়েছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের ৫১টি ভূখণ্ড চলে গেছে ভারতে। ভারতীয় ভূখণ্ডগুলোর অধিকাংশেরই অবস্থান বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডগুলো রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। ৫১টির মধ্যে ৪৭টিই কোচবিহারে। বাকি ৪টি রয়েছে জলপাইগুড়িতে। অবশ্য প্রশ্ন থেকেই যায় এসব কী র‍্যাডক্লিফের নিছক ভুল নাকি উপমহাদেশের ভবিষ্যৎকে জটিল করে তোলার এক অপপ্রয়াস ছিলো। যাই হউক, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই জটিলতাই যুগের পর যুগ বয়ে বেড়াতে হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতকে। সমস্যা মেটানোর চেষ্টাও হয়েছে বহুবার।

ছিটমহল জট কাটাতে প্রথম চুক্তি হয় ১৯৫৮ সালে নেহেরু ও নুনের মধ্যে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুন সীমান্ত সমস্যা সমাধানে একটি চুক্তি করেন। এটি 'নেহরু-নুন' চুক্তি হিসেবে পরিচিতি পায়। চুক্তি অনুযায়ী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দিনাজপুরের বেরুবাড়ীর উত্তর দিকের অর্ধেক অংশ ভারত এবং দক্ষিণ দিকের অর্ধেক অংশ ও এর সংলগ্ন এলাকা পাবে পূর্ব পাকিস্তান। এর আওতায় বেরুবাড়ীর সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হলেও ভারত এগিয়ে না আসায় তা মুখ থুবড়ে পড়ে। ফলে বেরুবাড়ীর দক্ষিণ দিকের অর্ধেক অংশ ও এর ছিটমহলের সুরাহা হয়নি। নেহেরু-নুন চুক্তিতে ছিটমহল বিনিময়ের উল্লেখ থাকলেও এ ব্যাপারে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সে দেশের সংবিধানের ১৪৩ ধারা সম্পর্কে সুপ্রিমকোর্টের মতামত চান। তখন আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংবিধানের সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে। সেই থেকে সীমান্ত বিলের জন্য সংবিধান সংশোধনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে ভারতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে সংবিধান সংশোধনী আর জনগণনার কারণে বিষয়টি ঝুলে থাকে। চলে যায় ঠাণ্ডা ঘরে। ছিটমহল জট আর কিছুতেই কাটে না। নেহরু-নুন চুক্তিতে ছিটমহল বিনিময়ের চেষ্টা একটা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর কার্যকর হয়নি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় নেহরু-নুন চুক্তি অকার্যকর হয়ে যায়। ওই চুক্তিতে বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাংলাদেশী নাগরিক এবং ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলের বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলকভাবেই ভারতীয় নাগরিক হতে হতো।

ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ে যে শব্দটি ঘুরেফিরে বার বার আসে তা হলো 'মুজিব-ইন্দিরা' চুক্তি। এই ছিটমহল সমস্যা সমাধানে প্রথম বাস্তবধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাধীন বাংলাদেশ ভারত রাষ্ট্রদ্বয়ের মধ্যে সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দ্বি-পক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি। এটি ১৯৭৪ সালের মে মাসের ১৬ তারিখে নয়াদিল্লীতে সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তিটি দুই দেশের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব, আন্তরিক মনোভাব ও পারস্পরিক বিশ্বাস, আর সবার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী -এ দুজন মহান রাষ্ট্রনায়কের শান্তি ও সম্প্রীতির অন্তর্দৃষ্টির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই চুক্তির অন্যতম বিষয় ছিল সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার স্থল-সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন করা। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হলো। বাংলাদেশের ভেতরে ছিটমহলবাসী বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাবে। আর পশ্চিমবঙ্গের ভেতরে ছিটমহলবাসী ভারতের নাগরিক হয়ে যাবে। জমির পরিমাণ নিয়ে বলা হয়, জমি বেশি বা কম এর জন্য কোন ক্ষতিপূরণ কোন দেশ দাবি করবে না। ছিটমহল এবং অপদখলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষ যারা পূর্বপুরুষের কাল হতে বসবাস করে আসছে, ব্যক্তি হিসাবে জমির মালিকানা তাদের। রাষ্ট্র আলাদা হয়ে গেছে বিধায় তাদের উচ্ছেদ করে ১৯৭৪-এ আবার ’৪৭-এর মতো উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টি করে মানুষগুলোকে মানবেতর অনিশ্চিত জীবনযাপনের দিকে ঠেলে না দেয়ার জন্যই চুক্তি করা হয়, যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে, শুধু মালিকানা বিনিময় হয়ে যাবে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে। এ কারণেই অতিরিক্ত জমির জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কোন ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের প্রয়োজন হয়নি। ১৯৭৪ সালের মে মাসের ১৬ তারিখে চুক্তির দিনই ভারত বেরুবাড়ীর মালিক হয়ে যায়। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ তখন পায়নি তিন বিঘা। কারণ এই চুক্তি বাংলাদেশের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হলেও ভারতের সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেয়ায় দেশটির পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদন করা হয়নি। ফলে এই চুক্তি বাস্তবায়নও আটকা পড়ে যায়।পরবর্তীতে এই চুক্তি বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর আগে অবশ্য ভারত নির্দিষ্ট সময়ে যাতায়াতের সুযোগ দেয়। পরিশেষে ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরে এসে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেন। ওই প্রোটোকল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী তিন বিঘা করিড়র চিরস্থায়ীভাবে উম্মুক্ত করে দেয়। তবে সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ভারতের লোকসভায় সীমান্ত চুক্তি বিল পাসের পর এই চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। এরপর গত ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় আসার পরে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বিল বিনিময় হয়। সেই চুক্তি বাস্তবায়নে একটি রূপরেখাও চূড়ান্ত করা হয়। সে অনুযায়ী সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন চলছে। আর সেই রূপরেখা অনুযায়ী পহেলা আগষ্ট দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হয়।

 

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি ১৯৭৪ সালে হলেও ২০১৫ সালে সেই চুক্তি ভারতের লোকসভায় চূড়ান্তভাবে পাস হয়। এই চুক্তি পাসের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত বছর মে মাসে ভারতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। সে সময় ভারতের মোদি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা সফরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন। সে সময় সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রীকে জানান, মোদি সরকার দুই দেশের সকল অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী। আলোচনার প্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে আরও অগ্রগতি হয়। মোদি সরকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে তোলার কূটনীতি গ্রহণ করেন। তারই আলোকে বিগত ইউপিএ সরকারের আমলে গড়ে উঠা বন্ধুসুলভ সম্পর্ক অব্যাহত থাকে এবং মোদি সরকার সীমান্ত বিল রাজ্য সভা ও লোকসভায় পাসের উদ্যোগ নেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অসম বিজেপি ছিটমহল বিনিময়ে নতুন করে আপত্তি উত্থাপন করে। ফলে মোদি সরকার অসমকে বাদ দিয়ে সীমান্ত বিল রাজ্যসভা ও লোকসভায় পাস করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত অসমকে অন্তর্ভুুক্ত করেই মোদি সরকার সীমান্ত বিল রাজ্য সভা ও লোকসভায় পাস করে। ফলে ছিটমহল বিনিময়ের ৪১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে।

 

রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমেই দ্বি-পক্ষীয় সমস্যার সমাধান সম্ভব, সীমান্ত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকেই এই বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত। বিশ্বের মহাপরাক্রমশালী রাষ্ট্রগুলো যেখানে ছিটমহল সমস্যা সমধানে হিমশিম খায় সেখানে বাংলাদেশ-ভারত এক অনন্য মৈত্রী স্থাপনের মাধ্যমে বিনা সংঘাতে সেই সমস্যার সমাধান করেছে, যা এক বিরল দৃষ্টান্ত। সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে যে সংশয়ের দেয়াল ছিল সেটি ভেঙে গেছে। এখন দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ভারতীয় সংসদ বহু প্রতীক্ষিত ছিটমহল বিনিময় বিল অনুমোদনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে বহু দশক ধরে চলা সীমানা বিরোধের স্থায়ী নিষ্পত্তির জন্য ভারত কী পরিমাণ আগ্রহী ছিলো। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের এই কর্মচাঞ্চল্য জনমনের অবিশ্বাস দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেছে। নিকট প্রতিবেশী সম্পর্কের গভীরতা ও জটিলতা যেন এক নিমিষেই কেটে গেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ভারতীয় সরকার ও জনগণ এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে অপূর্ব সমন্বয় ও সমঝোতা কালক্রমে আমলাতান্ত্রিকতার বেড়াজালে আটকে যাচ্ছিলো, পথ হারাচ্ছিলো অবহেলা আর সন্দেহের চোরাগলিতে। কিন্তু সেখান থেকে তেরঙ্গা-লাল সবুজ সম্পর্ককে এক অনিন্দ্য সুন্দর জায়গায় নিয়ে গিয়েছে এই সীমান্ত চুক্তি। সীমান্ত চুক্তি যেনো  দুই দেশের মানুষের ইতিহাস, ভূগোল, ভাবাবেগ, মূল্যবোধকে এক অপরুপ বিশেষত্ব দান করেছে। তাই এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে রাখতে ছিটমহল বিনিময়ের দিনটিকে জাতীয় দিবস করার দাবি জানাই। পহেলা আগস্টকে ‘ছিটমহল স্বাধীনতা দিবস’ বা ‘ছিটমহল বিনিময় দিবস’ নামে জাতীয় দিবসের স্বীকৃতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন রইলো।

লেখক- -হাসান ইবনে হামিদ,

রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat