×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০২-২৫
  • ৮১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোত্রা। গত বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আলোচনার ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) যোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোত্রা। নেপাল সফর শেষ করে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বুধবার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এফওসিতে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কোত্রা। বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ১৮তম আসরে শেখ হাসিনাকে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

 

এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবারের জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ২০টি দেশের জোট জি-২০ অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা সংস্থা। যারা বৈশ্বিক জিডিপির ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশও নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ বাস করে এ জোটভুক্ত দেশগুলিতে। বাংলাদেশ জি-২০ অন্তর্ভুক্ত দেশ না হলেও এবারের দিল্লী সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে ভারত গেস্ট কান্ট্রির মর্যাদা দিয়েছে বাংলাদেশকে। সদস্য দেশগুলোর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নয়টি দেশকে গেস্ট কান্ট্রি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবারের সম্মেলনে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের গেস্ট কান্ট্রির মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই সংবাদটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের ও গর্বের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে ভারত সফরে যেতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়। এতে করে দ্বিপক্ষীয় আলোচনারও সুযোগ সৃষ্টি হবে। জি-২০ সম্মেলনের সমন্বয়কারী হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, জি-২০ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য বৈশ্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার এক অনন্য সুযোগ। নিঃসন্দেহে এই সুযোগটি আওয়ামী লীগ সরকার কাজে লাগাতে চাইবে। নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ সরকার ও দেশকে আরেকবার বিশ্ব দরবারে পরিচয় করার সুযোগটি হয়তো হাতছাড়া করতে চাইবেন না।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বন্ধনকে অত্যন্ত দৃঢ় বলে বর্ণনা করেন বিনয় কোত্রা। এটা সত্যি যে, পুরো বিশ্ব এখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে মূল্যায়ন করে, যা ইতিমধ্যেই কৌশলগত পর্যায়ে পৌঁছেছে। যতো দিন যাচ্ছে এই সম্পর্ক আরও মজবুত হচ্ছে। বাংলাদেশ ভারতকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে ভাবেন এবং বন্ধুত্ব আরও গভীর হবে বলে সবাই আশা রাখেন। দুই প্রতিবেশীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে উভয় দেশই কাজ করতে পারে। রাজনীতি ও নিরাপত্তা, পানি সম্পদ, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবগুলো দিক পর্যালোচনা করেছেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব। ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) শর্ত সহজ করার চেষ্টা করছে ভারত। ফলে বাংলাদেশ সহজেই ঋণ নিতে এবং তা পরিশোধ করতে পারবে। দুই দেশের স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করেই দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করার পথ সহজ করা হচ্ছে। মূলত, বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লী সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাছাড়া বিনয় কোত্রার বৈঠক নিয়মিত আলোচনারও অংশ হিসেবে দেখছে দুই দেশ। গত এক বছরে দুই দেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকের সিদ্ধান্তও পর্যালোচনা করা হয়েছে ।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার সময় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনের বাণিজ্যিক উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। আসামের নুমালিগড়ের তেল শোধনাগার থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে ডিজেল সরবরাহ করা হবে। টঙ্গী-আখাউড়া রেললাইনের ডুয়েল গেজে সংস্কার, রেলের রোলিং স্টকের সরবরাহ এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে রেলের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে অগ্রগতি কতটা হলো, তা পর্যালোচনা করা হয়েছে এই বৈঠকে।

বাংলাদেশকে যখন অতিথি রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়েছে তখনই কিছু বিষয় নিশ্চিত ছিলো যার মাঝে অন্যতম হচ্ছে, এই সময়ের মাঝে বেশ কয়েকবার দুই দেশের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকসহ নানা স্তরের ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও কূটনৈতিক সূত্র জানায়। এ সূত্রে আরও জানা গেছে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে জেআরসির মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে ভারতের অনীহা রয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের প্রত্যাশা, দীর্ঘ এক যুগ পর মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, নৌপরিবহন, বাণিজ্য, পরিবেশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

 

জি-২০ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর অতিথি রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে জোটের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করেছে ভারত। ভারতের প্রতিবেশী প্রথম নীতির প্রতিফলন ঘটে বাংলাদেশকে এভাবে অন্তর্ভুক্তি করণের মাধ্যমে।   বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার এবং এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। পররাষ্ট্র সচিব কোত্রার সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী এবং বহুমুখী সহযোগিতায় আরও গতি সঞ্চার করবে বলে আশা প্রকাশ করছে উভয় দেশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকেও আলাদাভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে দুই দেশ। জি-২০ সম্মেলনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর সাথে শেখ হাসিনার বৈঠককে আলাদা গুরুত্বের সাথে দেখছে উভয় দেশ। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহুর্তে শেখ হাসিনার দিল্লী সফর নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। দুই দেশ ও সরকার যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিকট অতীতে দেখিয়েছে তা যেন অটুট থাকে সেই প্রত্যাশা সকলের।

লেখক- -হাসান ইবনে হামিদ, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat