×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৪-০৪
  • ৩০৫ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বিশ্ব গণমাধ্যমে বহুল আলোচিত ঘটনা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের পক্ষে তখন একটা বড় ভূমিকা পালন করে, যা বিশ্বজনমত গঠনে সহায়তা করে। তাছাড়া পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, নৃশংস বর্বরতা, ধ্বংসযজ্ঞ, শরণার্থীদের দুর্ভোগ বহির্বিশ্বে তুলে ধরায় বিশ্ববাসী মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরেছে। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত হয়েছে। বিদেশি প্রচারমাধ্যম বিশেষ করে রেডিওর বিভিন্ন খবর, কথিকা, গান  মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দেয় এবং সাহস জুগিয়ে বিজয়ের পথ সুগম করে। দুর্গম সংবাদপ্রবাহের সেই সময়েও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের খবর কিভাবে দ্রুত দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে গেলে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ঘটনা প্রবাহ সবার আগে আলোচনায় আনতে হবে। স্বাধীনতার মাস এই মার্চেই অনেক ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দিয়েছিলো যা শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খুব একটা প্রচার পায়নি। তবে ব্যতিক্রম ছিলো ভারতীয় গণমাধ্যম। ১৯৭১ সালের মার্চের ঘটনাপ্রবাহ ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে একমাত্র ভারতীয় গণমাধ্যমে এবং এরপর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ আসা শুরু হয়। ভারতীয় সাংবাদিকরা আগে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে এসে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য প্রকাশ করেন। এর পর যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন। বিবিসির মার্ক টালি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিলেন। এ ছাড়া সিডনি শনবার্গ, অ্যান্টনি ম্যাসকারেনহাস, সাইমন ড্রিং, নিকোলাস টোমালিন, ক্লেয়ার হলিংওয়ার্থ, মার্টিন ওলাকট, জন পিলজার, ডেভিড লোশাক, পিটার হ্যাজেনহার্স্টসহ অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ভারতীয় সাংবাদিকদের মধ্যে রয়েছেন, অন্নদাশঙ্কর রায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো লেখক-কবিরাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কলম ধরেন। আর আকাশবাণীতে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরাট কণ্ঠে যুদ্ধের সংবাদ পর্যালোচনাও ছিল অত্যন্ত হৃদয়কাড়া।

গণমাধ্যম যে এক বিশাল শক্তির নাম তা বোধ করি কারো অজানা না। গণমাধ্যমই একমাত্র শক্তি যা পারে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে, আবার ইয়েলো জার্নালিজমের বলি হয়ে অনেকক্ষেত্রে সত্যও মিথ্যা হিসেবে ধরা দিতে পারে। এটি এমনই এক শক্তি যা যেকোনো আন্দোলনকে এক নতুন বেগে ত্বরান্বিত করতে অথবা কোনো ত্বরান্বিত শক্তিকে নিমিষেই পিষে ফেলতে ফেলার ক্ষমতা রাখে। তাই যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে গণমাধ্যমের একটি বিশেষ কার্যকারিতা থেকেই যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও গণমাধ্যমে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যম যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে আমাদের মুক্তিসংগ্রামে তা স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় থাকবে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো অল ইন্ডিয়া রেডিও যার অন্য নাম আকাশবাণী। এছাড়াও রয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা, ইউনাইটেড নিউজ অফ ইন্ডিয়া, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্থান টাইমস সহ আরো অনেক গণমাধ্যম। যারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের পুরোভাগ এবং যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশকে নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। বিশেষ করে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণের পর গণমাধ্যমেও এর আঁচ লাগে। বিশেষ ক্রোরপত্র থেকে শুরু করে আলাদা গুরুত্ব পায় বাংলাদেশ

সীমান্তের এপারে বসে ওপারের দিকে কান পেতে রইলাম রবিবার দুপুরে ঢাকা বেতার শুনছি, আজ সেখানকার সামান্য অকিঞ্চিৎকর একটি কথাও যে কত অর্থময় হয়ে উঠতে পারে, এর আগে কোনদিন তা বুঝিনি পাকিস্তান রেডিও, ঢাকা শুনে আমরা অভ্যস্ত, কিন্তু শুধুমাত্র ঢাকা বেতার কেন্দ্র বলছি- নতুন লাগলো একঘন্টার অনুষ্ঠানসূচিতে একবার অবশ্য পাকিস্তানের উল্লেখ ছিল, কিন্তু তা মাত্র একবারই পরিচিতির এই পরিবর্তন যে জয় বাংলা ও জয় বাংলা ভাষাই সূচিত করেছে সেটা বুঝতে দেরি হল না..

এই সাবলীল, অর্থবহ লাইনগুলো ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়েছিলো রিপোর্টার সেই রিপোর্টের শিরোনাম দিয়েছিলেন বিদ্রোহী বেতার থেকে সত্যিই তা ছিলো বিদ্রোহী বেতার; যে বেতার পুরো স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণা যুগিয়েছে, যুদ্ধে দেশ মাতৃকার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মন্ত্র জপেছে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণ গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার ছিলো আন্তর্জাতিকভাবে তার প্রচার ও প্রসার সেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি তখন পালন করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম মুক্তিসংগ্রামে ভারতীয়দের সহায়তা আমরা জানলেও গণমাধ্যম ঠিক কি ভূমিকা পালন করেছে তা অনেকের অজানা আমরা অনেকেই জানিনা ৭ মার্চের পর বঙ্গবন্ধুর তর্জনীর হুংকার ও সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গোটা বিশ্বে কিভাবে ছড়িয়ে পরেছিলো মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই ভারতীয় গণমাধ্যমে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ছাপাচ্ছিলো বাংলাদেশের সংবাদ ৭ মার্চের পর তার আরো বিস্তৃতি ঘটে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় ভারতীয় গণমাধ্যম সর্বদা বাংলাদেশের পাশে থেকেছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরতা এবং গণহত্যা গোটা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছে

 ‘Troops must quit, Mujib tells Yahya- ইউনাইটেড নিউজ অফ ইন্ডিয়া ৮ মার্চের সংবাদকে খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে এই শিরোনামে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারের নিপীড়নের চিত্রও তুলে ধরা হয় একই পাতায় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ঢাকা রেডিও স্টেশন বন্ধের ঘোষণাও ফলাও করে প্রচার করা হয় শুধুমাত্র রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ঢাকা রেডিও স্টেশন প্রচার করার কারণে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় পাকিস্তান সামরিক সরকার সেদিনের পত্রিকার বলতে গেলে পুরোটাই ছিলো বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুময় আন্দোলন সংগ্রাম আর মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বুঝি সেদিন ইউনাইটেড নিউজ অফ ইন্ডিয়ার পাতায় পাতায় ছিলো মূলত বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে বিশ্ব পরিমন্ডলে নিয়ে স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে ভারতীয় এই গণমাধ্যম

আগে ফৌজ হঠুক, তারপর বৈঠকের কথা; মুজিবের সাফ জবাব- ৮ মার্চ আনন্দবাজার পত্রিকা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যকে প্রধান শিরোনাম করে সংবাদ প্রচার করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রবিবার ঢাকাতে ঠিক কি ঘটছিলো তা গোটা বিশ্বের জানা প্রায় অসম্ভব ছিলো কেননা দেশীয় সকল প্রচারমাধ্যম তখন বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, রবিবার বিকেল থেকে ঢাকা বেতার স্তব্ধ, বাইরের পৃথিবীতে ঢাকার সংবাদ পৌঁছানো আর সম্ভবপর নয় পরিস্থিতি যে ঘোলাটে হয়ে উঠছে এবং পাক সামরিক সরকার যে গণমাধ্যমে খড়্গ চালিয়েছে তার বিস্তর বর্ণণাও আসে গণমাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে তারা বিশ্লেষণ করে এক ভিন্নধর্মী রিপোর্ট করে যেখানে সরাসরি ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদে যোগদানের পূর্বশর্ত হিসেবে মুজিবের চারদফা দাবীকে সামনে আনা হয় সামরিক আইন খারিজ করা, সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরে যাওয়া, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া, সাম্প্রতিক নিধনযজ্ঞের তদন্ত এই চারদাবীকে স্পষ্ট করে তুলে ধরে আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলার মানুষের দাবীর এক অনবদ্য কন্ঠস্বর হয়ে সেদিন আনন্দবাজার থেকেছে বাংলাদেশের মানুষের পাশে

আকাশবাণী কলকাতা, খবর পড়ছি…’ এই লাইনটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এক জনপ্রিয় লাইন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাগ্রে অল ইন্ডিয়া রেডিও বা আকাশবাণী আমাদের যুদ্ধের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বিশ্ব গণমাধ্যমে আকাশবাণীর সংবাদ তখন বিশ্বের নামজাদা অন্যান্য মিডিয়াতেও তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো ১৯৭১ সালে গণমাধ্যম হিসেবে আকাশবাণীর গুরুত্ব বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অনুধাবন করা হয়তো কঠিন একটি দেশে মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার লড়াই চলছে আর পার্শ্ববর্তী দেশের রেডিও সেই যুদ্ধের পুঙ্খানুপুঙ্খ সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে এমন একটা সময়ে যখন আর কোনও সংবাদসূত্র তাঁদের কাছে নেই শুধু সংবাদ নয়, গান, ফিচার, কথিকা ইত্যাদি নানা বাংলা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তাঁদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করছে ও উদ্দীপ্ত করছে আকাশবাণী কলকাতা আকাশাবাণীর অনেক সাংবাদিকদের মাঝে বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশিই মনে রেখেছে দেবদুলাল বন্ধ্যোপাধ্যায়কে ভারী কণ্ঠস্বর ও অনবদ্য বাচনভঙ্গি দিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মুক্তিযুদ্ধের খবর পড়তে পড়তেই বাংলাদেশের সঙ্গে গড়ে ওঠে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক তিনি বলতেন, বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় স্বদেশ মানতেন, তাঁর পেশাগত জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়টা যতই রাজনৈতিক কারণ থাক, আকাশবাণী কলকাতার প্রযোজক, অনুষ্ঠান পরিবেশক, সঞ্চালক, সংবাদপাঠক যদি ওপার বাংলার সঙ্গে তাঁদের নাড়ির টান অনুভব না করতেন তবে শুধু সরকারি আদেশ পালনের জন্য এই আবেগ সঞ্চারিত হত না দেবদুলাল তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হতে পারেন এমন আরো সাংবাদিক রয়েছে যারা নিজের জীবনের পরোয়া না করে যুদ্ধের সময়টাতেও বাংলাদেশে এসেছেন, সংবাদ পরিবেশন করেছেন

 এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”— ১৯৭১-এর ৭ মার্চ রেসকোর্সে শেখ মুজিবুর রহমানের আবেগদীপ্ত ভাষণ রেকর্ড করতে ঢাকায় উপস্থিত হয়েছিলেন আকাশবাণীর উপেন তরফদার সেদিনের ঢাকার পরিস্থিতির যে বর্ণণা তিনি আকাশবাণীতে দিয়েছেন তার মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী জানতে পারে বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা কেননা  অবরুদ্ধ বাংলাদেশে সরকারের অনুগত যেসব পত্রিকা বের হতো, সেসবের খবর কেউ বিশ্বাস করত না বাইরের পত্রিকা আসার সুযোগও ছিল না তাই সবাই উন্মুখ হয়ে থাকত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, আকাশবাণী, বিবিসি এবং অন্যান্য ভারতীয় গণমাধ্যমের দিকে আকাশবাণী তখন কতোটা গুরুত্ব দিয়ে, সাংবাদিকরা নিজেদের জীবন বাজি রেখেছে তার আরেকটি উদাহরণ আমরা দেখতে পাই ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আকাশবাণীতে খবর এল, রাতে দুজন সাংবাদিককে একটি বিশেষ কাজে কোথাও যেতে হবে ঠিক করা হল, প্রণবেশ সেন এবং উপেন তরফদার আকাশবাণীর প্রতিনিধিত্ব করবেন তৎকালীনবি.এস.এফ-এরপিআরও সমর সেনের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের দল যখন সীমান্ত পেরিয়ে কুষ্টিয়া দিয়ে বাংলাদেশের মেহেরপুরে পৌঁছল তখন ভোর হয়ে গেছে সেখানে তখন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের গলায় ধ্বনিত হচ্ছে, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ও অন্যান্য নেতাদের উপস্থিতিতে সেখানে অস্থায়ী স্বাধীন বাংলাদেশ মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করলেন দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন পুর্ব-পাকিস্তান আজ থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ কলকাতার থিয়েটার রোডে তৈরি হল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের অফিস, যার বাংলাদেশি নাম হল মুজিবনগর পরের দিন ওই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং আকাশবাণী থেকে সম্প্রচার করা হল

সাতই মার্চের ভাষণের পর পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে ২৫ মার্চ ইতিহাসের বর্বর গণহত্যার পর ৩০ মার্চ নাগাদ যে টুকটাক সংবাদ বিশ্ব পেয়েছে তা ভারতীয় গণমাধ্যমের মাধ্যমেই ভারতের গণমাধ্যমগুলো ২৭ মার্চ থেকেই পাকিস্তানিদের নৃশংসতা ও বাঙালির প্রতিরোধযুদ্ধের খবর প্রকাশ ও প্রচার করছিল। এ ক্ষেত্রে কলকাতা ও আগরতলার বাংলা পত্রিকাগুলো অগ্রণী ভূমিকা নেয়। পরবর্তীতে ৩০ মার্চের পর সাইমন ড্রিং এর মাধ্যমে এই গণহত্যা প্রকাশ্যে আসে বিশ্ব গণমাধ্যমে ভারতের গণমাধ্যমগুলো ২৭ মার্চ থেকেই পাকিস্তানিদের নৃশংসতা ও বাঙালির প্রতিরোধযুদ্ধের খবর প্রকাশ ও প্রচার করে আসছিল এ ক্ষেত্রে কলকাতা ও আগরতলার বাংলা পত্রিকাগুলো অগ্রণী ভূমিকা নেয় কলকাতা প্রেসক্লাবের এক সাম্প্রতিক প্রকাশনা থেকে জানা যায়, অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দীপক মুখোপাধ্যায় ও সুরজিৎ ঘোষাল নামে দুই তরুণ সাংবাদিক চিরতরে হারিয়ে যান এভাবেই ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন নানা দেশের অজস্র সহমর্মী মানুষ যুদ্ধের মাঠে, রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে, শরণার্থী শিবিরে, প্রতিবাদে বা জনমত গঠনে কঠিন সেই সময়ে তাঁরা ভূমিকা রেখেছেন তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভারতীয় গণমাধ্যম যে ভূমিকা রেখেছে তা আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ হবে সাতই মার্চের অবিনশ্বর ভাষণে গান্ধীর অহিংস-অসহযোগ ও নিরস্ত্র প্রতিরোধ এবং নেতাজী সুভাষ বসুর সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের বার্তা একইসাথে ছিলো; আর তা বিশ্ববাসীকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বোধহয় তখন গণমাধ্যমের শক্তি সত্যিকারভাবে বুঝতে পেরেছিল স্বাধীনতার এই মাসে বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে ভারতীয় গণমাধ্যম সর্বোপরি ভারতবাসীকে

লেখক--হাসান ইবনে হামিদ, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat