×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৪-১১
  • ৩০২ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল মাস, মহান মার্চ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহাসিক পদক্ষেপের এক মাস। ঐতিহাসিক পদক্ষেপ এই কারণে বলা যে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয় এবং সেই সরকার শপথও গ্রহণ করে৷ ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয় যা মুজিবনগর সরকার নামে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ৷ ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ সংগ্রামের ফসল তথা আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে সর্বোপরি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় অস্থায়ী বিপ্লবী মুজিবনগর সরকার ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বজনমত সৃষ্টির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন স্বীকৃতি আদায়ে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এটি যথাসময়ে প্রতিষ্ঠিত না হলে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা বাস্তবে অসম্ভব হয়ে পড়ত। মুজিবনগর সরকারের সেই ঐতিহাসিক পটভূমি রচনায় তৎকালীন ভারত সরকারের অবদান সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। ইতিহাসে অনেকটা অবহেলার শিকার হয়েছে সেই সময়কার প্রেক্ষাপট!

মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতার সংগ্রাম বিফলে পর্যবসিত হয় যদি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় না করা যায়। আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে দরকার পরে কূটনৈতিক সহায়তা যা সেই ভূখন্ডের নিজস্ব সরকার না থাকলে করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। তাই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর দ্রুতই বাংলাদেশ সরকার গঠনের তাগিদ আসে কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ের জন্য। আর এক্ষেত্রে পুরো সহায়তা দেয় ভারত সরকার। ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সাল, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার গঠন হয়, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় আনুষ্ঠানিক শপথ নেয়। এর আগে ২৭ মার্চ ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় এক প্রস্তাবে অবিলম্বে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এরপর ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানায়। কিন্তু ভারত সরকার তখন বিচক্ষণতার সঙ্গে ধীরে চলো নীতি ও কূটনৈতিক কৌশলের পক্ষপাতী ছিলেন। ভারত ১৩ এপ্রিল বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে জানায়, পূর্ববাংলায় যা ঘটেছে, তাতে ভারত সরকার নীরব থাকবে না।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জার্মানির সেনাবাহিনী ফ্রান্স দখল করে নিলে জেনারেল দ্য গলে লন্ডনে যেভাবে ফ্রান্সের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন, সেভাবে ১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী বাংলাদেশ দখল করে বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার আদর্শের উত্তরসূরিরা কলকাতায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠন করেছিলেন। প্রবাসী সরকার ১৪ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গাকে রাজধানী করে সেখানে সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সনদ ঘোষণার ও স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের গোপন সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই কার্যক্রমের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যায় এবং পাকিস্তানি বিমানবাহিনী ১৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় বৃষ্টির মতো বোমা বর্ষণ করে এবং পাকহানাদার বাহিনী ওইদিনই চুয়াডাঙ্গা দখল করে নেয়।

ওই বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সিদ্ধান্ত নেন যে, পরবর্তী শপথ গ্রহণের দিনক্ষণ ও স্থান তিনি কাউকে জানাবেন না। পাকবাহিনীর বিমান হামলার কথা বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের মানচিত্র দেখে সর্বোত্তম নিরাপদ একটি স্থান তিনি বাছাই করেন। তার এই গোপনতম কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য তার বিশ্বস্ত সহচর ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে লে. কর্নেল শ্রী গোলক মজুমদার এবং বিএসএফের শ্রী চট্টপাধ্যায়কে দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার বিপর্যয় এড়াতে তাদের মধ্যে এ বিষয়ে কথা চলতো আকার ইঙ্গিতে এবং কোড ব্যবহারের মাধ্যমে

এদিকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত কলকাতার ৮নং থিয়েটার রোডে বাংলাদেশের সরকারের অফিসের কেউ জানে না, কলকাতা থেকে শত শত মাইল দূরে বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইতিহাসের এক স্বর্ণালি অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। মেহেরপুরে ১৭ এপ্রিলের গোপন পরিকল্পনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এতোই কঠোর-কঠিন গোপনীয়তা অবলম্বন করেন যে, শুধু বাংলাদেশের এমপিরা নন মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেন নি। তাদের শুধু বলা হয় তারা কেউ কলকাতার বাইরে বের হবেন না। ১৪ এপ্রিলের বিপর্যয়ের বেদনা ও গ্লানি মুছে ফেলতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কাণ্ডারি বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি তাজউদ্দীন আহমদের এই কোষবদ্ধ কঠোর গোপনীয়তা।

 

১৭ এপ্রিলের মেহেরপুরের পুণ্যময় প্রভাতের জন্য ১৬ এপ্রিল মধ্যরাতে কলকাতার বুকে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বিএসএফের কর্নেল চট্টপাধ্যায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ১০০টা গাড়ি ও বাসের ব্যবস্থা করেন। ৫০টি বাস ও গাড়িতে করে কলকাতা শহর ও আশপাশে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশের এমপিদের ঘুম ভাঙিয়ে একে একে গাড়িতে তোলা হতে থাকে। সকাল সাড়ে পাঁচটায় কলকাতা প্রেসক্লাব এবং হোটেল গ্র্যান্ড ও হোটেল পার্কের সামনে থেকে ৫০টি গাড়িতে ও বাসে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ক্যামেরাম্যান ও টিভি ক্রুদের তোলা হয়। কলকাতা প্রেসক্লাবে মৌমাছির মতো সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানদের তুলতে গেলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি রহমত আলী ছদ্মনামে পরিচিত ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও টাঙ্গাইলের এমপি আবদুল মান্নান। তারা অনেক প্রশ্ন করলেন। তাদের অনেক প্রশ্নের কোনো উত্তর পেলেন না তারা। তাদের যাত্রা কোথায়? বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি রহমত আলী শুধু বললেন : অজানার উদ্দেশে। ১৯৭১, ১৭ এপ্রিল বাঙালি জাতির সামনে তখন সবকিছুই ছিল অজানা ও অনিশ্চিত পথযাত্রা। শুধু নিশ্চিত ছিল স্বাধীনতা। মেহেরপুরের উদ্দেশ্য সেই স্বাধীনতার পথযাত্রার প্রথম ধাপ ১৭ এপ্রিলের যাত্রা। কাক ডাকা ভোরে কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে এবং হোটেল পার্ক ও গ্র্যান্ড হোটেল থেকে দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান এবং টিভি ক্রুদের নিয়ে একে একে ৫০টি গাড়ি ও বাস কলকাতা শহরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চললো অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে। তাদের গাইড হিসেবে অগ্রবর্তী গাড়িতে ছিল বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি রহমত আলী এবং আব্দুল মান্নান এমপি। অন্যদিকে ভারতীয় কমান্ডো বাহিনীর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে কলকাতা থেকে রহমত আলী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সাইক্লোস্টাইল করা ইংরেজি ও বাংলার বহু কপি সঙ্গে নিয়েছিলেন সাংবাদিকদের মধ্যে বিতরণের জন্য। ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্র ও ত্রাণ মন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক খুনী মোশতাক আহমদ এবং কর্নেল (অব.) আতাউল গনি ওসমানী একটি গাড়িতে রওনা হন।

মেহেরপুরের মহকুমা প্রশাসক তওফিক এলাহী চৌধুরী এবং এসপি মাহবুবের নেতৃত্বে বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে ছোট্ট একটা মঞ্চ সাজানো, ছোট দুটি কার্পেট বিছানো এবং দেবদারুর কচিপাতার তোরণ নির্মাণ কার্যক্রম তখনো চলছিল। তোরণের দুপাশে বঙ্গবন্ধুর বড় বড় ছবি ঝোলানো হয়।

দুপুরের মধ্যে বৈদ্যনাথ তলার আম্রকানন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মেহেরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা শেষ মুহূর্তে খবর পেয়ে যে যেখানে ছিল পঙ্গপালের মতো উড়ে আসতে থাকে। আনন্দ-আবেগে উদ্বেলিত শত শত কণ্ঠের জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো, গগন বিদারী স্লোগানে মেহেরপুরের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। স্লোগানে মুখরিত বৈদ্যনাথ তলার মঞ্চে দুপুরের পরপরই উঠলেন অনুষ্ঠানের পরিচালক আবদুল মান্নান এমপি। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াতের জন্য একজন মাওলানার নাম তিনি মাইকে ঘোষণা করলেন। কিন্তু সেই মাওলানাকে সেখানে পাওয়া গেল না। তার কারণ, সকাল থেকে মেহেরপুরের জামায়াত ও পাকিস্তানপন্থী দলগুলো বৈদ্যনাথ তলায় হিন্দুদের পূজোর অনুষ্ঠানে কেউ যাতে কোরআন তেলাওয়াত না করতে পারে সেজন্য মেহেরপুর মহকুমার সব মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেমদের তাড়িয়ে নিয়ে মেহেরপুর ছাড়া করে। ফলে সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত ভিড়ের মধ্য থেকে মেহেরপুরের কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মহেশ নগরের বাকের আলীকে মঞ্চে তুলে আনলো। ভারি মিষ্টি গলায় ক্বেরাত পড়তো সে। সেই বাকের আলীর কণ্ঠে আল্লাহর পাক কালাম তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান।(পবিত্র কোরআন তেলওয়াতের জন্য পরে পাকহানাদাররা তার গায়ে গুড় মাখিয়ে দিয়ে গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে তার শরীরে পিঁপড়ার বাসা ভেঙে ঢেলে দেয়)এরপর আবদুল মান্নান এমপি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সনদ আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করার জন্য মাইকে চিফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলীর নাম ঘোষণা করেন। তিনি মঞ্চে উঠে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু জয় বাংলা, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো স্লোগানের মধ্যে ৪৬৪ শব্দে রচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার সনদ পাঠ করেন।

স্বাধীনতা ঘোষণার এই সনদে সুস্পষ্টভাবে ও সুনির্দিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনের অনুসরণে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানি বর্বর সশস্ত্রবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর গণহত্যা শুরু করার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের মেজরিটি দলের নেতা হিসেবে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের অখণ্ডতা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে শেষ রক্ত বিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

স্বাধীনতা ঘোষণার সনদে আরো বলা হয়, ‘…সেইহেতু আমরা বাংলাদেশকে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিতেছি এবং উহার দ্বারা পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করিতেছি।''

 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল এই মুজিবনগর সরকার। কেননা ভারতের পক্ষে সোভিয়েত রাশিয়ার সরাসরি সমর্থন প্রদানে এই মুজিবনগর সরকার কাজে এসেছে। ভারত সরকার সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে ২২ বছরের শান্তি চুক্তি করে, সেই চুক্তির জের টেনে চমৎকার কূটনৈতিক দক্ষতায় বাংলাদেশ ও তার স্বাধীনতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে। ভারত সোভিয়েত সরকারকে বোঝাতে সমর্থ হন যে, ভারতের মতই বাংলাদেশ রাষ্ট্র হবে একটি সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। পৃথিবীর সেসময়ের শীর্ষশক্তি সোভিয়েত সরকার ভারতের বুদ্ধিদীপ্ত কূটনৈতিক দাবিকে অগ্রাহ্য করতে পারেনি, এখানেই ভারত সরকার তার বুদ্ধি দিয়ে পুরো যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেন। রুশ ছত্রছায়ার ফলেই ভারত চীন-আমেরিকা হুমকি থেকে মুক্ত হয়ে আমাদেরকে সক্রিয়ভাবে সামরিক সাহায্য দেওয়া শুরু করেন। রাশিয়ার এই সমর্থন আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে বিশ্ব পরিমন্ডলে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলো, আর তা সম্ভব হয়েছিলো ভারত সরকারের কারণেই। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন দেওয়ার পক্ষে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি অস্থায়ী সরকারকে ভারতের অভ্যন্তরে স্থান দেয়। সর্বোপরি শরণার্থীদের সহায়তার পাশাপাশি মুক্তিবাহিনী গঠনে সার্বিক সহায়তা দেয় ভারত। মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করে গোটা বিশ্বে আমাদের গণহত্যার চিত্র তুলে ধরে ভারত সরকার এভাবেই অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে আসে আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের কষ্টে অর্জিত দলিল। আমাদের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব কতো দক্ষতার সাথে, কতো বাধা অতিক্রম করে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ করেছিলো তা ভাবলেই গর্ববোধ করি, অনুপ্রেরণা পাই! আর সেই গর্বে ও অনুপ্রেরণায় যে নামটি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত তা হলো ভারত।

লেখক- হাসান ইবনে হামিদ, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat