×
  • প্রকাশিত : ২০২১-০৩-১৪
  • ১৪৫৯ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ নারীর তালিকায় ২০২০ সালে তাঁর অবস্থান ৩৯তম। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ফরেইন পলিসির বিশ্বব্যাপী শীর্ষ ১০০ বৈশ্বিক চিন্তাবিদদের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি বিশ্ব নারী নেত্রী পরিষদ-এর একজন সদস্য, যা বর্তমান প্রাক্তন নারী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীদের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক।

 

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একের পর এক ভূষিত হয়েছেন নানা সম্মাননায়। তার মধ্যে অন্যতম, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতৃত্বে ইউএন পরিবেশ বিষয়ক পুরস্কার- চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ , ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা জয় করে পেয়েছেন সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নারী শিক্ষা উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য অবদানের জন্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ এওয়ার্ড। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ভূষিত হয়েছেনলাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এ্যাওয়ার্ডে এই সম্মাননা তিনি পান ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন এর পক্ষ থেকে। এতো অর্জন যার,বলছিলাম সেই অসাধারণ নারীর কথা, যিনি নিজ গুন, মেধা প্রজ্ঞায় হয়ে উঠেছেন অনন্য, তিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার আরেক পরিচয় তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা।

 

শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের টুঙ্গিপাড়ায়। তাঁর পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি  টুঙ্গিপাড়াতে। ১৯৫৪ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হন। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন ১৯৬১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি তার বোন শেখ রেহানা বাদে পরিবারের সকল সদস্য শহীদ হন। স্রষ্টা চাইতেন তিনি আজকের এই অবস্থানে এসে দাঁড়াবেন, হয়ত তাই ইতিহাসের অন্যতম সেই দুঃসমযয়ে পড়াশোনার জন্য তিনি এবং বোন শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন।

 

এরপর শুরু হয় শেখ হাসিনার জীবনের কঠিনতম অধ্যায়। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন অন্যান্য জ্যেষ্ঠ নেতারা। প্রায় বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রবাস জীবনের ইতি টেনে নেত্রী ফিরে আসেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে।

 

তার কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশে শুরু হয় সামরিক শাসন। এই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগ। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসনের অবসান হলেও জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন বাংলাদেশে জামাতের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিরোধীদল হিসাবে থাকার পর, ১৯৯৬ এর জাতীয় নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ ভোটের বিশাল ব্যবধানে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নেত্রী বসেন প্রধানমন্ত্রীর আসনে। যদিও পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে প্রহসনের কারণে হেরে যায় আওয়ামী লীগ, আবারো ক্ষমতায় আসে বিএনপি জামাত জোট। এর পরের পথ ছিল অনেক দুর্গম আর প্রতিকূল। বিরোধী দলে থাকা কালে একে একে ১৯ বার তাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ অগাস্টের বোমাহামলা ছিল ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য ও ভয়াবহ দিন এদিন কোন রকমে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন অনেক নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মী। সেই ভয়াবহ দিনের ক্ষত আজও বয়ে বেড়াচ্ছে অনেক মানুষ।

 

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ১৬ জুলাই তাঁর বাসভবন "সুধা সদন" থেকে গ্রেফতারের পর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করে রাজবন্দী হিসেবে সেখানে রাখা হয় হাসিনাকে। কারামুক্তির পর তিনি চিকিৎসার জন্য কয়েক মাস বিদেশে অবস্থান করেন। এরপর দেশে ফিরে এলে তাঁর নেতৃত্বে আবারো আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত হয়। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়লাভ করে। বিজয়ী দলের সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে তিনি , ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ২য় বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তার দল আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে ২৬০টি আসন লাভ করে।

এর পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা, এ যেন এক নিরন্তর যাত্রা, যে যাত্রায় চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।  তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন করা প্রধানমন্ত্রী।

 

শুধু রাজনৈতিক অর্জন নয়, ব্যক্তি জীবনেও সফল তিনি। ১৯৬৭ সালে তিনি এম ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এম ওয়াজেদ মিয়া ছিলেন একজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। এক পুত্র আর এক কন্যার জননী শেখ হাসিনা। তার দুই সন্তানই নিজ কর্মক্ষেত্র থেকে আলো ছড়াচ্ছেন সারাবিশ্বে। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত তাও আবার সম্পূর্ণ বিনা বেতনে। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রখ্যাত অটিজম বিশেষজ্ঞ। সারাবিশ্বে তিনি অটিস্টিক শিশু ও তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য এবং একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী।

 

বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচক উন্নয়নে শেখ হাসিনার শাসনামল কে যথেষ্ট সফল হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তাঁর মেয়াদকালে বাংলাদেশে এসেছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, অর্থনীতির সূচক পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তারই হাত ধরে বাংলাদেশ স্বল্পন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবার লক্ষে কাজ করেছে, পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণিত রূপকল্প ২০৪১ বা বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে গড়ে তোলার জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা। এই রুপকল্পের হাত ধরেই বাংলাদেশ একদিন শিল্পায়নের মাধ্যমে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করবে। এই সফলতার গল্প লিখতে থাকলে কেবল পাতা ফুরোবে কিন্তু গল্প শেষ হবে না। আপনার জন্য নিরন্তর শুভকামনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat