×
  • প্রকাশিত : ২০২১-১২-২৪
  • ৮৫১ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধুর নৈতিক সাহস দেখে তরুণ বয়সে অনুপ্রাণিত হয়েছি। অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয়ে আমার প্রজন্মের লাখ লাখ ভারতীয়র মতো আমিও উচ্ছ্বসিত হয়েছি এবং বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বাস ও সাহসে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছি।

বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁর এই উচ্ছ্বাস এবং আবেগভরা বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে 'মহাবিজয়ের মহানায়ক' শিরোনামে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানের সম্মানীয় অতিথি হিসেবে গত ১৫ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি  তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর করেন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ধানমন্ডি ৩২-এ অবস্থিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে অংশ নেন। রাষ্ট্রপতি বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং এই উন্নয়নের পথে ভারত-বাংলাদেশের অনন্য বন্ধুত্বের সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন যে বন্ধুত্ব পারস্পরিক শ্রদ্ধা-আস্থা-সমতা আর শ্রদ্ধাবোধের উপর দাঁড়িয়ে

পঞ্চাশ বছর আগের এই দিনেই দক্ষিণ এশিয়ার আদর্শিক মানচিত্র বদলে গিয়েছিল এবং গর্বিত জাতি হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিলো। সেই জন্ম ইতিহাসে ভারতের নাম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। নয় মাসের যুদ্ধে ভারত তার সবটুকু দিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, বিজয় না আসা পর্যন্ত আমাদের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। তাই সুবর্ণজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে দুই দেশ ঘটা করে মৈত্রী দিবস পালনের উদ্যোগ নেয় এ বছরের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরে। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিলো ভারত, সেই দিনটিকেই মৈত্রী দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। তবে এবারের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এই মৈত্রী দিবস বাংলাদেশ-ভারত ছাড়াও আরো ১৮টি দেশে পালিত হয়েছে ভারত-বাংলাদেশ এর উদ্যোগেই। ঢাকা ও দিল্লীর বাইরেও এবারের মৈত্রী দিবস যেসব দেশে পালিত হয়েছে সেগুলো হলো, বেলজিয়াম, কানাডা, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জাপান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারত সরকার রাজধানী নয়াদিল্লীর 'ঐতিহাসিক ইন্ডিয়া গেট'-এ তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। ১৪-১৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ওই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মহান মুক্তিযুদ্ধে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তের যুদ্ধের কিছু ঘটনা এবং পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের সেই দৃশ্যগুলোর জীবন্ত অভিনয় দেখানো হয়েছে আলোকরশ্মির মায়াজালে। ভারত ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে আলোকিত করেছেন।

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতির মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যাত্রা। তবে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক সম্পর্কের শুরু হয় ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ। তৎকালীন বাংলাদেশের সরকার প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কর্তৃক ২৫ বছর মেয়াদি স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিকমুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বা অর্থনৈতিক সম্পর্কের যাত্রা শুরু। এই চুক্তিকে মৈত্রী চুক্তি হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এটি ১৯৭৪ সালের ১৬ মে নয়াদিল্লীতে সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির অন্যতম বিষয় ছিল সমঝোতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার স্থল-সীমানা নির্ধারণ সম্পন্ন করা। এই চুক্তিটি দুই দেশের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব, আন্তরিক মনোভাব ও পারস্পরিক বিশ্বাস, আর সবার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীএ দুজন মহান রাষ্ট্রনায়কের শান্তি ও সম্প্রীতির অন্তর্দৃষ্টির প্রতীক। এই চুক্তি নিয়ে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বিরোধীরা সমালোচনা করেছে, এই চুক্তিকে গোলামী চুক্তি, দাসত্বের চুক্তি হিসেবেও বিরোধীরা মন্তব্য করেছে। কিন্তু দিনশেষে দেখা গিয়েছে এই চুক্তির আলোকেই ২০১৫ সালের পহেলা আগস্ট ঐতিহাসিক ছিটমহল বিনিময় চুক্তি আলোর মুখ দেখেছে। দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নাগরিকহীন পরিচয়ে বেঁচে থাকা মানুষ ফিরে পেয়েছে নিজের ভূখন্ড, নিজস্ব পরিচয়। আর তা সম্ভব হয়েছে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির কারণেই।

মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূচনা হলেও ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কাপুরুষোচিতভাবে সপরিবারে হত্যার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটে।  জিয়াউর রহমান ও এরশাদের স্বৈরশাসনের ১৫ বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়নি। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ফিরলেও তেমন কোন অগ্রগতি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে এসে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রা নেয়। ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর গঙ্গা নদীর পানিবন্টন চুক্তির স্বাক্ষরের মাধ্যমে দীর্ঘ ২১ বছরের অচলাবস্থা কাটায় দুই দেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া ত্রিশ বছর মেয়াদী এই চুক্তি সই করেন। ভারত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে ফারাক্কা বাঁধ নির্মানের কারণে ভাটিরদেশ বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায় যে সংকট তৈরি হচ্ছিল, তা থেকে মুক্তির জন্যই এই চুক্তিটি করা হয়।

২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর আবারো ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে ছেদ পরে। পাকিস্তানের সহায়তায় বাংলাদেশে একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণের খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে আসতে থাকে। সেভেন সিস্টার্স রাজ্যসমূহে অস্থিরতা তৈরির লক্ষ্যে তৎকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দশ ট্রাক অস্ত্র চালানের মতো ঘটনা ঘটায়। যদিও শেষত সেই অস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে পৌঁছেনি। এভাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একদম তলানীতে গিয়ে ঠেকে। বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে দুই দেশ উল্লেখযোগ্য কোন চুক্তি বা সমাধায় যেতে পারেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। দুই দেশের বন্ধুতা যেনো এক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার একবছর পর ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম ভারত সফরে যান৷ সেসময় ১০০ কোটি ডলারের এলওসি বা ঋণরেখা অনুমোদন করে ভারত৷ এই অর্থে জনপরিবহন, সড়ক, রেলপথ সেতু আর অভ্যন্তরীন নৌপথের ১৪ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি হয়৷বর্তমানে ধাপে ধাপে ১০০ কোটি ডলার ঋণ ও ১৪ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে দু দেশ। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর আগে এতো ঋণ ভারত বাংলাদেশকে দেয়নি। তাই এই ঋণ দেয়ার মাধ্যমে ভারত প্রতিবেশী প্রথম নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় এবং বিশ্বকে এক ভিন্ন বার্তা দেয়।

২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি হয়৷ ২০১১ সালের ১৩ই জানুয়ারি তা কার্যকর হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী কোনো দেশের নাগরিক অন্য দেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকে অনুরোধক্রমে ফেরত পাঠাতে পারবে৷ ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির প্রস্তাব অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে কার্যকর হয় ভারত ও বাংলাদেশের বহিঃসমর্পণ চুক্তি, যার আওতায় দুই দেশ ফৌজদারী মামলায় বিচারাধীন বা দন্ডপ্রাপ্ত আসামী বিনিময় করার সুযোগ পায়। তবে কোন দন্ডপ্রাপ্ত বা সাজাভোগকারী আসামীকে সাজার মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে যদি বাংলাদেশে আনা হয় তবে সেই সাজার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সাজা ভোগ করতে হবে।

গত দশকের সবচেয়ে আলোচিত এবং প্রশংসিত কাজ হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়। হাসিনা-মোদী সরকার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন কেবল এই কাজের মধ্য দিয়েই। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারত-বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন হয়৷ যার মাধ্যমে ২০১৫ সালের জুলাইতে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত ছিটমহল বিনিময় হয়৷ ভারতের ১১১টি ছিটমহল যুক্ত হয় বাংলাদেশের সাথে৷ একইভাবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলও হয়ে যায় ভারতের অংশ৷ ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাত, বাংলাদেশ-ভারত এর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মুহুর্ত। দীর্ঘ ৬৮ বছর শোষণ, নির্যাতন এবং পরিচয়হীন এক জনগোষ্ঠীকে স্বাধীনতার আনন্দে উজ্জীবিত করার দিন। সীমান্ত পাড়ের মানুষগুলো জানতোও না যে, পহেলা আগষ্টের সূর্যোদয় তাদের জন্য কী সীমাহীন আনন্দ বার্তা নিয়ে আসছে, তাদের পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত করতে যাচ্ছে। ৩১ জুলাই মধ্যরাত, বহু প্রতীক্ষার পরে দুই দেশের মধ্যে বিনিময় হয় ছিটমহল। আর প্রতিবেশী দুই দেশের ছিটমহলবাসীরা ফিরে পায় এক নতুন জীবন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ছিটমহলবাসীর মধ্যরাতের এই স্বাধীনতা ভারত-বাংলাদেশ এর বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়েছে, দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের এক নবদ্বার উন্মুক্ত করেছে।

অর্থনৈতিক ট্রানজিট নিয়েও দুদেশের মধ্যে শীতল একটা সম্পর্ক চলছিলো, অবশেষে ট্রানজিট দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুনভাবে মোড় নেয়। দুই দেশের মধ্যে হওয়া বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী এক দেশ আরেক দেশের জল, স্থল ও রেলপথ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য ট্রানজিটের সুবিধা নিতে পারে৷ ২০১৬ সালে মাশুলের বিনিময়ে ভারতকে আশুগঞ্জ নৌ বন্দর দিয়ে বহুমাত্রিক ট্রানজিট সুবিধা দেয় বাংলাদেশ৷ সড়কপথে ট্রানজিট দিতে ২০১৫ সালে আখাউড়া অগরতলা সীমান্ত দিয়ে পরীক্ষামূলক চালান পাঠানো হয় শুধু আর্থিকভাবে নয়, দীর্ঘ মেয়াদেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে এই ট্রানজিটের মাধ্যমে। তবে উভয় দেশকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যেনো সন্ত্রাসীদের চারণভূমি না হয়ে উঠে এই ট্রানজিট করিডোর।

এখন কোলকাতা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে শিলিগুড়ি যাবে৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় এ বিষয়ক একটি চুক্তি হয়৷ চুক্তি অনুযায়ী এজন্য দুই দেশকে তাদের অংশের রেলপথ নির্মাণ করতে হবে৷এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। দুই দেশ খুব গুরুত্বের সাথে কানেক্টিভিটির জায়গাকে সমৃদ্ধ করছে। শুধু পদ্মাসেতুর এ রেল প্রকল্প নয় কিছুদিন আগে আমরা দেখেছি ফেনী নদীর উপরেও মৈত্রী সেতু স্থাপনের মাধ্যমে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ভারত-বাংলাদেশ। এই মৈত্রী সেতুকে দক্ষিণ এশিয়ার নতুন বাণিজ্য করিডোর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই সেতু একইসাথে আন্তঃ বাণিজ্যের যেমন সম্প্রসারণ ঘটাচ্ছে তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে এক বিশাল প্রভাব ফেলছে। আবার নতুন খবর এসেছে, এবার ঢাকা থেকে আসা যাবে কলকাতা, সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এটাই হতে চলেছে। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র বছর তিনেক। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প চালুর পর ঢাকা-কলকাতার যোগাযোগে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে। এখন যেখানে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে তিন বছর পর সেখানে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা থেকে কলকাতায় পৌঁছানো যাবে। এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুই দেশ যোগাযোগে অনেক উন্নতি সাধন করছে।

হাসিনা-মোদী সরকার সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। প্রতিরক্ষা, বিনিয়োগ ও বাণিজ্য খাত, উন্নয়ন সহযোগিতা কাঠামো, অবকাঠামো খাতসহ সর্বদিক থেকেই সম্পর্কের নবযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু দুদেশের সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক হয়ে এক গন্ডির মধ্যে থাকলে হবেনা বরং বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের বিশেষ করে যুব সমাজের মধ্যে একটা একীভূত শক্তি হয়ে চলার মানসিকতা বৃদ্ধি করতে হবে। দুদেশের জনগণের আকাঙ্খা পূরণে একসঙ্গে এগিয়ে চলার প্রচুর সুযোগ রয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হলে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, যেকোন দেশের সাথে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ককে বন্ধুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করতে হবে। যেহেতু ভারত পার্শ্ববর্তী দেশ তাই নানা ইস্যুতে দুই দেশের মতপার্থক্য থাকবে আর তা কাটিয়ে উঠতে হবে আলোচনার মাধ্যমে। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ধরে রেখে আলোচনার মাধ্যমে খুব দ্রুত অমীমাংসিত বিষয়গুলো মীমাংসা করবে দুদেশ। জয় হোক বন্ধুত্বের, জয় হোক ভারত-বাংলাদেশের।

লেখক- -হাসান ইবনে হামিদ,

রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat