এই সময়ে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে কবিরুল বাশার বলেন, ‘গত বছরের একটা প্রভাব এখানে আছে। প্রকৃতিতে গত বছরের ডেঙ্গু রোগী যেহেতু ছিল সে জন্যও এটা বেড়ে গেছে হঠাৎ। এ ছাড়া পানি জমার কিছু উৎস সারা বছরই থাকায় এডিশ মশা সারা বছরই আমরা পাচ্ছিলাম। আবার এখন বৃষ্টি শুরু হওয়ায় পানি জমার স্থান আরো বেড়েছে। ফলে এটা (ডেঙ্গু) ধীরে ধীরে জ্যামিতিক হারে বাড়তে শুরু করবে।’
২৩ বছরে নির্মূল হয়নি ডেঙ্গু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এডিস মশা আমরা ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আমাদের মশক নিধন কার্যক্রম মূলত নর্দমাভিত্তিক (ড্রেন)। অর্থাৎ বিভিন্ন নর্দমা, জলাশয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। আরেকটা হলো ফগিং (ওষুধ মিশ্রিত ধোঁয়া ছড়ানো)। কিন্তু আমাদের ভবনগুলো এখন বেশির ভাগই বহুতল। ভবনের নিচে ফগিং করলেও ওপরে করা যাচ্ছে না। ছাদে পানি জমলে এডিস মশা সেখানেই বংশবিস্তার করবে।’
২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়। এরপর ২৩ বছরেও ডেঙ্গু কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করতে পেরেছি। তাহলে ডেঙ্গুর বেলায় কেন পারছি না? তার মানে কোথাও ঘাটতি আছে। ২৩ বছর আগেও মশক নিধন কর্মীরাই ছিল এটার মূল, এখনো তারাই। তারা তো যোগ্য ব্যক্তি নয়। এটার জন্য দরকার কীটতত্ত্ববিদ, কীটতত্ত্ব টেকনিশিয়ান ও কীটতত্ত্ব সহকারী। সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। অধিদপ্তর প্রতিবছরই মশার ঘনত্ব নিয়ে দু-তিনবার করে জরিপ করলেও সেই অনুযায়ী স্থানীয় সরকার তাল মিলিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আবার অধিদপ্তরের জরিপও ঢাকাকেন্দ্রিক।’
শুধু ঢাকা নয়, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পুরো দেশকে নিয়েই পরিকল্পনা করতে হবে বলে মত দেন এই জনস্বাস্থ্যবিদ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখন জাতীয় কর্মকৌশল প্রণয়ন করা দরকার। এটা এখন শুধু ঢাকার রোগ নয়, অন্য শহরগুলোতেও হচ্ছে। এখানে কীটতত্ত্ববিদ, কীটতাত্ত্বিক গবেষণাগার, যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রসহ কীটতাত্ত্বিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে আরো বড় আকারে ডেঙ্গু দেখা দেবে। সেটা জেলা শহর, উপজেলায় ছড়িয়ে পড়বে।
এদিকে অধ্যাপক কবিরুল বাশার বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য হটস্পট ম্যানেজমেন্টের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে সেই ঠিকানা ধরে সেখানে ক্র্যাশ প্রগ্রাম করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। সেখানকার মানুষজনকে সচেতন করতে হবে এবং নিজেদের বাড়ির আঙিনা ও অন্যান্য জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেন এডিস মশার প্রজনন না হতে পারে।
চলতি বছরের ডেঙ্গুর সামগ্রিক চিত্র : চলতি বছর এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩৪ জন। এর মধ্যে ২১ জন মারা গেছে চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে। বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) মারা গেছে ১৩ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন এবং মে মাসে দুজন মারা যায়। সবচেয়ে বেশি, ২৭ জন মারা গেছে ঢাকা মহানগরে। চট্টগ্রামে ছয়জন এবং বরিশাল বিভাগে একজন মারা গেছে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩০৫ জনের মধ্যে ঢাকায় ২৩২ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে ৭৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এক হাজার ১১৮। এর মধ্যে ঢাকায় ৮৭০ জন এবং ঢাকার বাইরে ২৪৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি।
চলতি বছর জানুয়ারিতে ৫৬৬, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩ এবং মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়।