×
  • প্রকাশিত : ২০২০-১২-২৩
  • ২৪৮৯ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক
"জন্মদিন" 
আমি মনে করি মানবজীবনের সবচেয়ে বড় দিন, জন্মদিন। কেন না মানুষের জীবনে যত  আনন্দোৎসব কিংবা যে কোনো বিশেষ দিনই আসুক না কেন? সবই আসে একজন মানুষের জন্মের পর।সুতরাং জন্মদিনের চেয়ে বড় আর কোনো দিন হতে পারে বলে আমি মনে করি না।জন্মদিন যেমন  আনন্দ বয়ে আনে,ঠিক তেমনি  বেদনাময়  কঠিন বাস্তবতাও মনে করিয়ে দেয়।মনে করিয়ে দেয় জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে মৃত্যুর দিকে আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা! তবুও জন্মদিন আসে, আবার চলেও যায়।

আজ ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ইং তারিখ। বিজয়ের মাস।আজ আমার দেখা  এমন এক মহৎপ্রাণ ব্যক্তির জন্মদিন, যাঁর ব্যখ্যা সামান্য লিখনিতে সমাপ্তি সম্ভব নয়। তবুও কিছুটা লিখে যাই! ১৯৭১ সাল, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিঁনি ৫/৬ বছরের একজন শিশু মাত্র! কী গভীর দেশ প্রেম বুকের গভীরে 
তাঁর! সেই শিশু বেলায়!
তীর- ধনুকে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা!খেলা শেষে একদিন বাংলার বিজয় আসবে, সে স্বপ্ন নিয়ে শিশুটির নিদ্রিত হওয়া!দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে একদিন ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয় আসে।সেদিন সেই বিজয় উল্লাসে তিঁনিও মেতে উঠেন যুদ্ধ জয় করা  বীর মুক্তিসেনাদের মতোই!সেই শিশু বেলার  মতোই আজও তিঁনি তাঁর কবিতায় এমন করে লিখেন, 
যেন  তিঁনিও একজন বীর মুক্তিসেনা! আমি নিচে তাঁর লিখা একটি কবিতা যুক্ত করি অনুমতি ছাড়াই ------

   আমি সেই মুক্তিসেনা
মুস্তফা কামরুল আখতার 

"শোনো, এ বিজয়ের দিনে আমায় লাগে কি চেনা?
আমার কেন যেন মনে হয়, আমি সেই মুক্তিসেনা!
এমন লাগে কেন? যেন আমি এ মাটির ধূলিকণা 
খুব ধীরে জেগে উঠি, বুকে একাত্তর, ব্যথা যন্ত্রণা!
আমিই শহীদ, বুকে বুলেট-বেয়োনেট, মনে হয়
রক্তে ভাসা দেহটি আমার মিশে যায়, আসে বিজয়!

শোনো, আমি সেই মুক্তিসেনা, গোসাইলডাঙায় ঘর,
আমি ছাত্র তখন, মাত্র কলেজে, চোখে স্বপ্নবালুচর।
অসংখ্য সফল যুদ্ধশেষে, একদিন, আমি মরে যাই
সম্মুখসমরে, বুকচেরা বুলেট, এ মাটিতেই হয় ঠাঁই ।

যেন ধূলিকণা হতে জাগি সাতচল্লিশটি বছর পর, 
আমার দেশেরই মাটির গন্ধে, খুঁজি আমার ঘর।
খুঁজি আমার সেই যুদ্ধসাথী, যে ট্রেঞ্চে আমার লাশ
নিথর চোখে আলো নিভেছিল, ছিল শেষ নিঃশ্বাস! 

সেই দুর্জয় বাসনা মুক্তির, তোমরা এখনো বলো?
জানতাম, সে চেতনাই আমাকে যুদ্ধে ডেকেছিল।
এখন কি ভয় পায় পাকসেনারা এই স্বাধীন দেশ?
মনে রেখেছে, আমাদের গর্জন অদম্য জয়ের রেশ?

মা আমার বেঁচে ছিলেন, আমি একদিন ফিরব বলে,
ফিরতে পারিনি, ফিরতে চাইতাম দেশ স্বাধীন হলে।
আমার মাকে দেখেছ? মায়ের কি অনেক কষ্ট ছিল?
একটা মিষ্টি বোন ছিল। ওর কী হয়েছিল, বলো!
আমার বুকপকেটে শহীদ সহযোদ্ধার চিঠি ছিল,  
ওর বাবাকে লেখা, কেউ কি সেটা দিয়ে এসেছিল?"
-----------০-----------

বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধা ও এদেশকে তিঁনি যে প্রাণের অধিক ভালোবাসেন, তা বুঝতে পেরেছিলাম সেদিনই।যেদিন শিহাবের মুক্তিযুদ্ধের অভিনয় দেখে বাইপাস সার্জারি করা ক্ষত-বিক্ষত বুকেই শিহাবকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন!তাইতো পৃথিবীর আর সব পুরস্কার এই কোলের কাছে তুচ্ছ।শিহাবের শত জনমেও  এই কোলটিই শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের আসন দখল করে থাকবে ইনশাআল্লাহ। 

 আমার পরম সৌভাগ্য, এমন একজন মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখার/জানার সুযোগ হয়েছে। আমার জীবনে মায়ের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে এই মানুষটিকে ভাবার সুযোগ হয়েছে।

পুত্র শিহাব অনেকের কাছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী শিশু শিল্পী- "আল-হাসনাত মাসুম শিহাব' নামে, আবার কারো কারো কাছে ক্ষুদে মুজিব/ক্ষুদে বঙ্গবন্ধু নামে যে  পরিচিতি  পেয়েছে, তার কিছুই যাঁকে ছাড়া সম্ভব হতো না,এই সেই তিঁনি। 
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ  রয়েছেন,  যাঁরা কারো কারো জীবনে আসে দেবদূত হয়ে জীবন বদলে দিতে। তেমনই এই মানুষটি  শিহাবের জীবনে এসেছেন জীবন বদলে দিতে।তিনিই বুঝিয়েছেন জীবন কত সুন্দর! তিনিই শিখিয়েছেন সহজ সুন্দর সৎ পথে পথ চলতে।শিখিয়েছেন  জীবনের কঠিন পথকে কিভাবে জয় করতে হয়। বুঝিয়েছেন সততা মানুষের জীবনে আঘাত আনলেও সম্মান দেয় আকাশ ছুঁয়া।

  ১৭.০৩.১৭ ইং তারিখ থেকে
যিঁনি প্রতিটি বিষয়েই শিহাবকে  দিক নির্দেশনা দিয়েই যাচ্ছেন,দিয়ে যাচ্ছেন  অফুরন্ত স্নেহ মমতা ভালোবাসা। যাঁর দেখানো প্রতিটি  মুসৃণ এবং সুন্দর পথে চলেই শিহাবের সুনিশ্চিত বিজয় আসে তিঁনি হলেন "প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার " স্যার। ( রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ)।
এই একজন মানুষের গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না।তবুও কিছু বলি-- তিনি শুধুই একজন প্রফেসরই নন। তিনি একাধারে একজন গূণী লেখক, একজন পরিচিত কবি,একজন আবৃত্তি শিল্পী, একজন সঙ্গীত শিল্পী, একজন চিত্র শিল্পী এবং সর্বপরি তিনি একজন অনেস্ট ব্যক্তি।সবশেষে বলি তিনি একজন আদর্শবান শ্রেষ্ঠ বাবা।যে বাবা নিজের তিন শিশু কন্যা সন্তানকে পাখির ডানার মতোই  নিজের দু'হাতে আগলে রেখে বড় করেছেন, মানুষ গড়েছেন, তিঁনি একাই মা-বাবা দু'জনের আদর দিয়ে।তিনি শুধু নিজের সন্তানদেরই আগলে রাখেন না,পরম মমতা দিয়ে অতি যত্নে আগলে রাখেন নিজের শিক্ষার্থীদেরও। ঠিক তেমনি তিনি শিহাবকেও আগলে রেখেছেন পরম মমতায়।এই করোনা কালেও তিনি শিহাবের সুস্বাস্থ্য কামনা করে দিক নির্দেশনা দিয়েই চলেছেন! হঠাৎ যদি তিনি শিহাবকে  আর পথ দেখাতে ভুলেও যান, তবুও যে আলোর পথ তিনি দেখিয়েছেন সে পথে চললেই অসৎপথ বা অন্ধকার পথের দেখা শিহাব একজীবনে অন্তত আর পাবে না। শিহাবের সাথে পরিচয়ের শুরুতেই তিনি সিটি কলেজ অডিটোরিয়াম মঞ্চে দাঁড়িয়ে আবেকপ্রবণ কন্ঠে কিছু বলে যান,এবং পরে মঞ্চে বলা কথা গুলো নিজেরই ফেসবুক ওয়ালে শিহাবের ভাষণের আংশিক ভিডিও সহ পোস্ট করেন।

সেদিনের সেই পোস্টটির কপি পেস্ট নিচে দিলাম---

"ছোট্ট শিশুটি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসি ক ভাষণটি দিয়েছে কী সাবলীলতায়। 
যেন একটুকরো ইতিহাস! 
অসাধারণ অনুভূতি-আবহ তৈরি হলো পুরো অডিটোরিয়াম জুড়ে। 
করতালিতে ভরে গেল।
অজস্র ক্লিক ঘিরতে থাকে অসম্ভবসুন্দর শিশুটির অবয়ব। 
ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দিত করা হলো, শিশুটির মাকে ডাকা হলো মঞ্চে। 

মঞ্চে উঠে বক্তাদের একজন আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বলে গেলেন, 
'ধন্য সেই মা, সালাম সে-ই মাকে, যিনি আমাদের হাজার বছরের অহংকার বঙ্গবন্ধু আর ইতিহাসবোধ দিয়ে বড় করছেন তাঁর সন্তানকে।

শিশুকাল থেকেই দেয়ার আনন্দ উপভোগ করেই এসেছিলাম। পাওয়ার আনন্দ কখনোই আমাকে আনন্দিত করতো না।
কিন্তু এই একজন মানুষ শিহাবের সাথে সাথে আমার জীবনও বদলে দিয়েছেন।এই মানুষটির কাছে না চাইতেই এত বেশি পেয়েছি যে,আমার সারাজীবনের প্রাপ্তি গুলো একত্রে করলেও তার সমতুল্য হবে না,যতটা তিঁনি দিয়েছেন। পেতে পেতে আমার স্বপ্নরা ডানা মেলে।প্রত্যাশা গুলো বেড়েই চলে! আর তিঁনি নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে আড়াল করে দু'হাত ভরে উজাড় করে দিয়েই যান  আমাদের! বুঝিয়েছেন পাওয়ার আনন্দও কতটা মধুর হতে পারে!আমাদের প্রতি এই একজন মানুষের অবদান, আকাশ সমান।যদি পর জনম বলে সত্যিই কিছু থেকে থাকে, তাহলে চাইব এই মানুষটি যেন এমনই করেই আমার/আমাদের জীবনে ফিরে ফিরে আসেন শত জনমেও। আমার পরিবারের প্রতিটি মানুষ স্যারের নৈতিকতা, সন্তান প্রেম, দেশপ্রেম , মানব প্রেমের এই অসামান্য উদারতা দেখে নতশিরে স্যারকে শ্রদ্ধা জানায় শত সহস্র বার।আজকের দিনে প্রাণ ভরে দোয়া চাইব, যাঁর বুকে এতো দেশপ্রেম!যিঁনি সৃষ্টির সব কিছুর জন্যেই এতটা উদার! তাঁর মৃত্যু যেন এমন মৃত্যু হয়,  মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামিন তাঁকে যেন শহীদদের সাথে কবুল করেন।আরও চাইব,মানব জীবনের সর্বোচ্চ আয়ু দিয়ে আল্লাহ্ যেন মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখেন কন্যাদের জন্য।দেশের জন্য।আমাদের জন্য।আজকের দিনে  আমি, শিহাব সহ আমার পরিবারের সকলের পক্ষ থেকে এক পৃথিবী ফুটন্ত ফুলের শুভেচ্ছা জানাই ---শুভ জন্মদিন শ্রেষ্ঠজন আমার।পরিশেষে আগামীর প্রতিটি ক্ষনের সুখ সুন্দর সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে অসীম অসীম শ্রদ্ধা জানাই নতশিরে।।

শুভেচ্ছান্তেঃ সাবিকুন্নাহার শিউলী।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat