বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি সংগ্রামের সাধারণ ইতিহাসে খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। কিন্তু মাতৃভাষা বাংলার স্বীকৃতি অর্জনে সেই রক্ত ঝরা ইতিহসের সঙ্গে মিশে আছে আমাদের অনেক নারী ভাষা সৈনিকদের ত্যাগ ও জীবনদানের গল্প। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবী নিয়ে যেসব আলোকবর্তিকারা এগিয়ে গিয়েছিলো রাজপথে, তাদের মাঝে অন্যতম হলেন ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগম।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় মমতাজ বেগম নারায়ণগঞ্জ জেলার মর্গ্যান হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সারা দেশে সভা সমাবেশের উপর চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও '৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে মর্গ্যান হাইস্কুলের নিকটস্থ রহমতুল্লাহ মুসলিম ইনস্টিটিউট মাঠে একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনসভায় মর্গ্যান স্কুলের ছাত্রীসহ মহিলাদের প্রথম মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন মমতাজ বেগম।
চরম বাঁধা এবং রক্ষনশীল পরিবেশের মধ্যেও নারীদের একত্রিত করে মিছিলে অংশগ্রহণ করা এবং ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে গোপন কার্যক্রম চালানোর দায়ে পুলিশ তার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে উত্তেজিত জনতা থানা ঘেরাও করে। জনতার বিশাল বাঁধার মুখে পড়ে লাঠিচার্জ এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ শুরু করে পুলিশ। পুলিশ-জনতার তীব্র সংঘর্ষে আহত হন শত শত ব্যক্তি। গ্রেপ্তার হন শতাধিক।
এরপর সরকার মমতাজ বেগমকে শর্তাধীন বন্ড সইয়ের মাধ্যমে মুক্তি দিতে চাইলে তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এর ফলে দীর্ঘ কারাভোগ করতে হয় তাকে । ভালোবাসার মানুষটির থেকেও তালাক প্রাপ্ত হন তিনি। এমনকি তার সরকারি চাকরিটিও হারাতে হয়। অবশেষে ১৯৫৩ সালের মে মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পান মমতাজ বেগম।
৫২’র বহ্নিশিখা ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগমের মত অসংখ্য মহীয়সীদের অবদানে আজ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা!
এ জাতীয় আরো খবর..