×
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৬-২০
  • ২৭৮ বার পঠিত
  • নিজস্ব প্রতিবেদক

রংপুরের তিস্তা নদীতে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করেছে। উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় শুকনো তিস্তায় হু হু করে পানি বাড়ছে। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে থাকলেও আগামীকাল বুধবার সকালে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। এ অবস্থায় পবিত্র ঈদুল আজহার আগে তিস্তার তীরের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) রংপুর কার্যালয় জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার বেলা একটায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার নিচে অবস্থান করছে। উজানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তায় পানি বেড়ে কাল (বুধবার) সকালের মধ্যে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। তিস্তা ছাড়াও কুড়িগ্রামের ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে পারে। তিস্তা নদী-তীরবর্তী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হওয়ার আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে যেতে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার রাতে তিস্তায় পানি বাড়লেও আজ সকালে কমেছে। আজ রাতের যেকোনো সময়ে আবার পানি বেড়ে যেতে পারে। ইতিমধ্যে তিস্তার তীরের কয়েকটি এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইছলি গ্রামের দুদু মিয়া (৪৫) ইতিমধ্যে বাঁধের ওপর নতুন করে ঘর নির্মাণ শুরু করেছেন। স্ত্রীসহ তাঁর পাঁচজনের সংসার। বন্যার পানি উঠলে ছোটাছুটি করতে কষ্ট হয় বলে তিনি টিনের বেড়া দিয়ে চালাঘর তুলছেন। দুদু মিয়া বলেন, ‘গেল (সোমবার) রাইতোত বাড়ির আঙিনাত পানি উঠছিল। সকাল হইতে সেই পানি নামি (নেমে) গেইছে। ফির পানির ঢল আসবে। তাই কষ্ট করার আগোত বাঁধোত ঘর করতোছি।’ বাঁধের ওপর কথা হয় ইছলি গ্রামের নূরুল হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগোত বন্যা হইতো একবার। গত বছর থাকি দেখিছে (দেখি) কয়েকবার পানি বাড়ে আর কমে। এই জন্যে হামার চরের মানুষের খুব কষ্ট হইছে। এবার পানি ওঠার অগোতে (আগে) আইসা লাগবে বাঁধোত (বাঁধ)।’ একই এলাকার আলীমউদ্দিন (৬০) বাঁধের মধ্যে জায়গা ঠিক করতে এসেছেন। গত বছর কয়েক দফা তাঁর বাড়িতে বন্যার পানি উঠেছিল। তিনি বলেন, ‘বাঁধোত আসিয়া আশ্রয় নেওয়া লাগবে। তাই জায়গা দেখপার আসছি।’ পাশের বাগেরহাট চরাঞ্চলের মানুষেরাও নিরাপদ আশ্রয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চরের বাসিন্দা মোস্তাফিজার রহমান, হোসেন আলী, মজিবর রহমান, ফজলুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, গত রাতে হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে তাঁদের বাড়িতে ওঠে। সেই পানি সকালের মধ্যে নেমেও যায়। আবার রাতে পানি বাড়ার কথা জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। তাঁরা নিরাপদ স্থানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লক্ষ্মিটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসছে। মানুষকে পানিবন্দী থেকে রক্ষা করতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহায়তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঈদের আগে এবার চরবাসীর কষ্ট বেড়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, উত্তর চিলাখাল, সাউথপাড়া, মটুকপুর; গজঘণ্টা ইউনিয়নের ছালাপাক, মহিষাসুর, রমাকান্ত, আলালচর, জয়দেব এলাকা এবং নোহালী ও আলমবিদিত ইউনিয়নের বাসিন্দারাও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের পাহাড়ি ঢল নামতে শুরু করেছে। এ কারণে তিস্তায় পানি বেড়ে যেতে পারে। পানির স্রোতের¯কারণে নিয়মানুযায়ী তিস্তা ব্যারাজের সব কটি (৪৪) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat